Tuesday, March 31, 2015

বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম

           বেদ-পুরানে মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম
  • সকল অমুসলিমদের ন্যায় হিন্দুদেরকেও ইসলাম ধর্মের প্রতি দাওয়াত দেয়া মুসলমানদের কর্তব্য। মুসলিম দেশে এ দায়িত্ব পালন না করলে মুসলমানদের আল্লাহর দরবারে জওয়াবদিহী করতে হবে। অমুসলিম ও হিন্দুদের নিকট দাওয়াত পেশ করার জন্য উত্তম পদ্ধতি হল তাদেরকে সরাসরি কুরআনী দাওয়াত পেশ করা যে, মহান আল্লাহ তা‘আলা এক ও অদ্বিতীয়। তাঁর কোন প্রকার শরীক নেই। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তা‘আলার সর্বশেষ নবী। তাঁর পরে আর কোন নতুন নবী আসবে না এবং তাঁর নবী হওয়ার পর পূর্ববর্তী সকল ধর্ম রহিত হয়ে গেছে। সুতরাং দুনিয়া ও আখিরাতের নাজাত ও কামিয়ারী একমাত্র ইসলাম ধর্মে নিহীত। এখন অন্য কোন ধর্ম মান্য করে কোন মানুষ পরকালে নাজাত পাবে না। বরং তাঁর সেই ধর্ম আল্লাহ তা‘আলার দরবারে কস্মিনকালেও গ্রহণযোগ্য হবে না এবং সে ব্যক্তি চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামী হবে।

    কুরআন কারীমে এসব কথা বিস্তারিতভাবে বিভিন্ন স্থানে বর্ণিত হয়েছে। কুরআন যে, সম্পূর্ণ সহীহ এবং সকল প্রকার দোষ-ত্রুটি ও সন্দেহের উর্ধ্বে এ কথা কুরআনে বর্ণিত অসংখ্য ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবায়নের দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে। তাছাড়া কুরআন বার বার তার নমুনা বাক্য পেশ করার জন্য বিশ্ব অমুসলিমদের প্রতি কিয়ামত পর্যন্ত চ্যালেঞ্জ করে রেখেছে। চতুর্থবার কুরআনের শধুমাত্র একটি বাক্যের ন্যায় বাক্য তৈরি করে পেশ করার যে চ্যালেঞ্জ করেছে দেড় হাজার বছর পর্যন্ত কোন অমুসলিম ব্যক্তি, সংস্থা বা তাদের আন্তর্জাতিক সেমিনার ও চ্যালেঞ্জর মুকাবিলা করতে সাহস করেনি। এ কথাও কুরআনের সত্যতার এবং আল্লাহ প্রদত্ত কিতাব হওয়ার জবরদস্ত দলীল। সুতরাং সমস্ত অমুসলিমদের কর্তব্য বিষয়টি নিয়ে ফিকির করা এবং নিজেকে আখিরাতের কঠিন আজাব থেকে বাঁচানোর জণ্য দীনে ইসলাম কবূল করা।

    উক্ত মূল দাওয়াতের সাথে সহায়ক হিসেবে হিন্দুদেরকে তাদের ধর্মগ্রন্থ ও ধর্মযাজকদের মতামতও তাদের সামনে তুলে ধরা যায়। এ জন্যই বর্ণিত নিবন্ধটি পাঠকদের খিদমতে পেশ করা হচ্ছে।

    সম্প্রতি ভারতের প্রসিদ্ধ ধর্মাচার্য ‘ড. বেদ প্রকাশ উপাধ্যায়’ রিসার্চ স্কলার, সংস্কৃত বিভাগ, প্রয়োগ বিশ্ববিদ্যালয় এলাহাবাদ, “কল্কি অবতার এবং মোহাম্মদ সাহেব” নামে একটি গবেষণা গ্রন্থ রচনা করেছেন। সংক্ষিপ্ত করার লক্ষ্যে উক্ত গ্রন্থের বিশেষ বিশেষ স্থান, যাকে উক্ত গ্রন্থের সারবস্তু বললেও অত্যুক্তি হবে না, উপস্থাপন করা হচ্ছে। উক্ত গ্রন্থে ড. বেদ প্রকাশ বলেন-
    ঐতিহাসিক বিষয়ে গবেষণা করার প্রতি দুর্নিবার আকাঙ্খা ও অভিলাষ নিজের অন্তরে সর্বদা পোষণ করি। বেদ, বাইবেল এবং বৌদ্ধ-গ্রন্থে যে অন্তিম ঋষির আগমন সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে, তাতে মোহাম্মদ সাহেবই প্রমাণিত হন। অতপর আমার অন্তরে এ প্রেরণা জাগ্রত হয় যে, সত্য প্রকাশিত করা আবশ্যক, যদিও এটা কোন মানুষের নিকট অপ্রিয় লাগে। মোহাম্মাদ সাহেবের পূর্ব যুগে ভারত এবং আরববাসীগণের একই ধর্ম ছিল। এর বহু প্রমাণ বিদ্যমান, কিন্তু তা উদ্ধৃত করার উপযুক্ত স্থান নয় এটা। আমি ধর্মীয় সংকীর্ণতার পক্ষপাতি নই। যদি কোন স্থানে কোন সত্য কথা থাকে তাকে অস্বীকার করার দু:সাহস করতে পারি না। বেদসমূহে দ্বাদশ পত্মীধারী এক উষ্ট্রারোহ ব্যক্তির আগমনের ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে। যাঁর নাম নরাশংস হবে। সায়নের নরাশংস-এর অর্থ বলেছেন যে, যিনি মানুষ কর্তৃক প্রশংসিত হন। কিন্তু আমার বিশ্লেষণ অনুসারে আমি সায়নের সাথে একমত নই। কারন আমার মতে নরাশংস শব্দ এমন নরস অর্থাৎ ব্যক্তিকে সূচিত করে, যাঁর নামের অর্থ হবে প্রশংসিত। মুহাম্মদ আরবী শব্দের অর্থ প্রশংসিত। অতএব মুহাম্মদ এবং নরাশংস একার্থবোধক শব্দ। আলোচ্য গ্রন্থে আমি যথাসাধ্য সত্য উদঘাটন করার প্রয়াস পেয়েছি।  

    ইসলামী সংস্কৃতিতে নবী-রাসূল বা পয়গাম্বরগণের যে স্থান, প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতিতে অবতারগণের সেই স্থান। মুসলমানগণ মোহাম্মদ সাহেবকে সর্বশেষ নবী বা মহাপুরুষ বলে স্বীকার করেন এবং ভারতীয় সংস্কৃতিতে তাকে কলিযুগের শেষ অবতার বলা হয়েছে। বিদেশে কেবলমাত্র নবী আগমন করে এবং ভারতে কেবলমাত্র অবতার আগমন করেন, এমন হতে পারে না। পয়গাম্বর কেবলমাত্র আরবে আবির্ভূত হবেন, ভারতে হবে না; এটা ন্যায় বিচারসম্মত নয়। সে জন্য মুহাম্মদ সাহেবকে যখন সর্বশেষ পয়গাম্বর বা মহাপুরুষ বলে অবগত হলাম, তখন আমার অন্তরে পুরাণে উল্লেখিত কল্কি অবতার রচিত বিষয়ক অধ্যায়সমূহ পড়ার বিশেষ আগ্রহ জন্মিল। ভারতীয় সংস্কৃতি অনুযায়ী ইতিপূর্বেই কলি-যুগের কিছু অংশ বিগত হয়েছে। কলি-যুগে যে সমস্ত ঘটনা সংঘটিত হয়েছে এবং যে সকল ঘটনা ঘটবে, আমি তার সমুদয় বিষয় মোহাম্মদ সাহেবের জীবনাবলীর সাথে সযত্নে তুলনা করি। ফলে তা সম্যকভাবে মিলে গিয়েছে। মোহাম্মদ সাহেবের তুলনাত্মক গ্রন্থ অধ্যায়ণ করে কেউ যেন এ ধারণা না করেন যে, আসলে মোহাম্মদ সাহেবের চরিত্রের রূপরেখা নিয়ে পরবর্তীকালে লোকেরা কল্কির কল্পনা করেছে। এ জন্য আমি সে সকল সনাতন ধর্ম গ্রন্থসমূহের আশ্রয় করে আলোচ্য গ্রন্থ প্রণয়ন করেছি, তারা মধ্যে পুরাণের রচনাকাল (মোহাম্মদ সাহেব এর বহু পূর্বে তা) প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যুক্তি দ্বারা প্রমানিত করেছি।  

    একেশ্বরবাদ
    ঋগবেদ বিশ্ব-চরাচরে পরিব্যপ্ত ঈশ্বরের বর্ণনা বহুরূপে প্রধান করা হয়েছে।এর ফলে দেববাদের প্রতিপাদন করত: ঋগবেদকে বহু দেববাদী  গ্রন্থ করে দিয়েছেন। অনেকে ঋগবেদে উল্লেখিত বিভিন্ন নাম এবং বিভিন্ন গুণাবলী দেখে একাধিক দেবতার কল্পনা করেছেন। এটা ঋগবেদের অন্তর্নিহিত তত্ত্ব সম্পর্কে অজ্ঞতার ফল। প্রকৃতপক্ষে সত্ত্বা এক; তাঁর বিভিন্ন গুণের বিভিন্ন বর্ণনা প্রদত্ত হয়েছে।

    ইন্দ্র, মিত্র, বরুণ, অগ্নি, গরুত্মান, যম এভং মাতারিখা ইত্যাদি নাম দ্বারা একই সত্ত্বাকে বিভিন্নরূপে বর্ণনা করা হয়েছে।

    এন্দ্র মিত্রং বরূণ মগ্বিমাহুরথো দিব্য: স সুপর্নো গরুত্মান,

    একং সদ বিগ্র বহুধা বদন্ত্যগিন্য মাতরিখানমাহু:

    ঋ,বে,ম, ১০/সু১১৪/ম,৫

    বেদান্তে ঘোষণা করা হয়েছে যে, এবং ব্রক্ষ্ম দিতীয়ং নাস্তি, নেহ নানাস্তি কিঞ্চন” অর্থ পরমেশ্বর, এক, তিনি ব্যতীত কেউ নেই।  
    ঋগবেদের অগ্নিসূক্ত, ইন্দ্রসূক্ত, বরুন সূক্ত, যম সূক্ত এবং বিঞ্চুসূক্ত ইত্যাদি বিভিন্ন নামে ও গুণে য সত্ত্বার মহিমা ও যশগাণ ব্যক্ত করা হয়েছে, এককভাবে সে সত্ত্বাই ঈশ্বর। মানুষ তাঁকে বিভিন্নভাবে গ্রহণ করে। কেউ তাঁকে শিব বলেন, কেউ তাঁকে শক্তি ভাবেন, কেউ তাঁকে ব্রক্ষ মানেন, কেউ তাঁকে বুদ্ধ মনে করেন। কিন্তু একটি জিনিষের বিভিন্ন রূপ দেখে তাকে ভিন্ন ভিন্ন জিনিষ মনে করা বিরাট ভুল। এভাবে অর্থ করলে প্রকৃতপক্ষে বেদের অপব্যাখ্যা হবে এবং পরিণামে আর্য ধর্মকে বিকৃত করা হবে। দেব-দেবী, নর-নারী, সৎ-অসৎ বিশ্ব চরাচরের সর্বত্র ঈশ্বর চৈতন্যরূপে অধিষ্ঠিত আছেন। যদি ঈশ্বর বিশ্বে চেতানরূপে ব্যপ্ত না হতেন, তাহলে জগতের সমস্ত ক্রিয়াকলাপ স্তব্ধ হয়ে যেতে। যে ব্যক্তি স্বীয় অন্ত:করণ পবিত্র ও পরিশুদ্ধ রাখে, তার মধ্যে পরমানন্দ সত্ত্বার প্রতিফলন হয়। সে জন্য শিরায় -শিরায় ঈশ্বরকে অনুভব ও ধারণ করা উচিৎ এবং সদাচার ও নিষ্ঠার দ্বারা তাঁকে লাভ করতে প্রযত্ন করা আবশ্যক।